গ্যালারি

আল্লাহর বিরুদ্ধে আপনার এত অভিযোগ কেন ! কেন এত অভিমান!


আমাদের বর্তমান সমাজে এমন অনেক লোক আছেন যারা নিজেদের অনেক ইচ্ছা পূরন না হওয়া, বিপদাপদের সম্মুখীন হওয়া ও দূঃখ দূর্দশার কারনে আল্লাহর প্রতি অভিমান করেন, অনেকে আল্লাহর ইবাদত থেকে মুখ ফিরিয়ে নেন।কিন্তু কেন কখনো কি ভেবে দেখেছেন আজ আপনি যত দূঃখ কষ্ট, অসুবিধার মধ্যে আছেন তার কারন আপনি নিজেই! “তোমাদের যেসব বিপদ-আপদ স্পর্শ করে, সেগুলি তোমাদের কৃতকর্মের ফল।” (সূরা শূরা- ৪২/৩০)
একটু চোখ বন্ধ করে ভেবে দেখুন, চলে যান আপনার জীবনের অতীতে। নিজেকে অতীতের সেই স্থানে নিয়ে যান যখন থেকে আপনি ভাল- মন্দ বুঝতে শিখেছেন। এবার চিন্তা করুন সেই সময় থেকে আজ পর্যন্ত আপনি কি কি অন্যায় করেছেন, কি কি পাপ করেছেন, কাকে ধোকা দিয়েছেন, কেন দিয়েছেন, কার সাথে অন্যায় করেছেন কি ধরনের অন্যায় করেছেন।সবকিছু একটু সময় নিয়ে চিন্তা করে দেখুন। এবার চিন্তা করুন যে আপনি যে অন্যায় করেছেন, যে পাপ করেছেন তার জন্য ইসলামে কি শাস্তি আছে। আর আপনার পাপের কথা দুনিয়েতে অন্য কেউ না জানলেও আল্লাহ জানেন। এবার ভেবে দেখুন আপনি বর্তমানে সে কষ্টে আছেন, যে সমস্যায় আছেন, বা আপনি যে কষ্ট পেয়েছেন, যে শাস্তি পেয়েছেন বা পাচ্ছেন তা আপনার কৃত অন্যায় পাপের তুলনায় কম না বেশি। বা আপনি যে অন্যায় করেছেন সেই অনুযায়ী আপনার শাস্তি বর্তমান অবস্থার থেকে বেশি হওয়া উচিৎ কিনা! আল্লাহ কারো সাথে অবিচার করেন না। ভেবে দেখুন আপনি আজ যে কষ্টে আছেন তার কারন আপনি নিজেই, আল্লাহ আপনার সাথে কোন অবিচার করেননি বা করছেন না। 
আজ পর্যন্ত আমি যত মানুষ কে এই বিষয়ে চিন্তা করে দেখার জন্য বলেছি তারা সকলেই একথা স্বীকার করেছেন যে তাদের কৃত কর্মের ফলই তারা পাচ্ছে। তাহলে কেন এত অভিযোগ অভিমান আল্লাহর সাথে। একটা কথা মনে রাখবেন আল্লাহ যা করেন বান্দার মঙ্গলের জন্যই করেন। আপনি হয়তো বর্তমানে এমন অবস্থার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন যা আপনাকে অনেক পেরেশানীতে রেখেছে, কিন্তু দেখবেন হয়তো ভবিষ্যতে কোন এক সময়ে আপনি ঠিকই বুঝবেন যে আপনার এই অবস্থার কারনে আপনার সাময়িক ক্ষতি,দুশ্চিন্তা থাকলেও পরবর্তীতে সেটা আপনার মঙ্গলের কারন হয়েই দাড়াবে। 
যে ব্যক্তি আল্লাহকে ভয় করে চলে, আল্লাহ তাকে (দুঃখ-কষ্ট থেকে) মুক্তির পথ বের করে দেন এবং যে স্থান সম্পর্কে সে ধারণা করেনি, সেখান থেকে তিনি তাকে জীবিকা প্রদান করেন।
(সূরা তালাকঃ ২,৩)
আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যখন আল্লাহ তাঁর বান্দার মঙ্গল চান, তখন তিনি তাকে তাড়াতাড়ি দুনিয়াতে (পাপের) শাস্তি দিয়ে দেন। আর যখন আল্লাহ তাঁর বান্দার অমঙ্গল চান, তখন তিনি তাকে (শাস্তিদানে) বিরত থাকেন। পরিশেষে কিয়ামতের দিন তাকে পুরোপুরি শাস্তি দেবেন। ’’ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেন, ‘‘বড় পরীক্ষার বড় প্রতিদান রয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা যখন কোনো জাতিকে ভালবাসেন, তখন তার পরীক্ষা নেন। ফলে তাতে যে সন্তুষ্ট (ধৈর্য) প্রকাশ করবে, তার জন্য (আল্লাহর) সন্তুষ্টি রয়েছে। আর যে (আল্লাহর পরীক্ষায়) অসন্তুষ্ট হবে, তার জন্য রয়েছে আল্লাহর অসন্তুষ্টি।’ [মুসলিম ২৩৯৬, ইবনু মাজাহ ৪০৩১]

আপনি হয়তো চিন্তা করছেন যে আল্লাহ কে এতো ডাকেন, আল্লাহর কাছে এতো দোয়া করেন কিন্তু আল্লাহ আপনার দোয়া কবুল করছেন না। যা আপনি কোন একটা বিষয় খুব দ্রুত চাচ্ছেন কিন্তু সেটা হচ্ছেনা। ভূলে যাবেননা আপনি যখন কোন পাপ বা অন্যায় করছেন আল্লাহ কিন্তু সাথে সাথে আপনাকে তার জন্য শাস্তি দিচ্ছেন না। তাই সর্ব অবস্থায় আল্লাহর উপর ভরসা করুন, আর নিজে জীবনে যত পাপ অন্যায় করেছেন তার জন্য খাস নিয়্যাতে আল্লাহর কাছে তওবা করে মাফ চান। আল্লাহ শিরক করা বাদে বান্দার সমস্ত গোনাহ মাফ করেন যাকে ইচ্ছা তাকে। প্রয়োজন আপনার একান্ত তওবার।বান্দা যখন আল্লাহর কাছে কোন কিছু চায় আল্লাহ তাকে কখনো খালি হাতে ফেরান না। হয় বান্দা যা চাচ্ছে আল্লাহ তাকে সেটা দান করেন, নয়তো তাকে তার থেকে উত্তম কিছু দান করেন, নতুবা তার কোন বিপদ আপদ দূর হয়ে যায় যা বান্দা যানেনা অথবা বন্দার দোয়া ইবাদতের জন্য আল্লাহ পরকালে বান্দার জন্য কোন পুরস্কার নির্ধারন করে রাখেন। তাই আল্লাহর প্রতি অভিযোগ অভিমান না করে আল্লাহর নিকট মাফ চেয়ে নিজেকে সম্পূর্ণ ভাবে আল্লাহর কাছে সমর্পন করে দিন। দেখবেন হাজারো দূঃখ কস্টের মাঝেও সূখ খুঁজে পাবেন। মন্যে থাকবে অন্য রকম অনাবিল শান্তি যা আল্লাহর ইবাদত ছাড়া অন্য কোন পন্থায় পাওয়া সম্ভব নয়।

“আর আমি তোমাদের পরীক্ষা নেব কিছুটা ভয়, ক্ষুধা, মাল ও জানের ক্ষতি ও ফল-শস্যাদি বিনষ্টের মাধ্যমে। তবে সুসংবাদ হল ধৈর্যশীলদের জন্য।” (সূরা বাক্বারাহ: ২/১৫৫)
“হে আদম সন্তান তোমার গোনাহ যদি আকাশের মেঘমালা পর্যন্ত পৌছে যায় আর তুমি আমার কাছে ক্ষমা চাও আমি ক্ষমা করে দেব।” ( তিরমিযী,হাদীসে কুদসী- সহীহ)

এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান